,

চিরনিদ্রায় নবীগঞ্জের হাফেজ মোজাক্কির, অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায়

মতিউর রহমান মুন্না ॥ দূর্ঘটনায় নিহত মোজাক্কির হোসেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতেন তিনি। যেমন ছিল তার সততা তেমনি তার নর্মভদ্র আচরণ দিয়েই অল্প সময়ে মন জয় করেছেন সবার। তাইতো হাজারো মানুষের অশ্রসিক্ত নয়নের ভালোবাসায় মোজাক্কিরকে শেষ বিদায় দেয়া হলো। গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গজনাইপুর জামে-মসজিদ নিকটবর্তী ঈদগাহ ময়দানে দূর্ঘটনায় নিহত মোজাক্কির হোসেনের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে মোজাক্কিরের পরিবারের লোকজন,আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব,শিক্ষকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক, সংগঠনের হাজারো মানুষ সমবেত হন। জানাযার নামাজ শেষে কোরআনে হাফেজ মোজাক্কির হোসেনকে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিন্দ্রায় সমাহিত করা হয়। ৪ বোন ও ১ ভাইয়ের মাঝে মোজাক্কির ছিল দ্বিতীয়। সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের এক মাত্র পুত্র সন্তানকে হারালেন মুবাশ্বির হোসেন ও ঝরনা বেগম। মোজাক্কির উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের গজনাইপুর গ্রামের সৌদিআরব প্রবাসী মোবাশ্বির হোসেনের পুত্র । নিহত হাফেজ মোজাক্কির তার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টের পরিচয় বক্সে সম্প্রতি একটি পোস্ট দেন। এতে লেখা ছিল- ‘প্রিয় বন্ধুরা কখনো যদি জানেন মোজাক্কির নামের মানুষটি মারা গেছে তাহলে মাফ করে দিয়েন !।’ সে মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার বন্ধু-বান্ধবসহ অসংখ্য মানুষ এই পোষ্টের স্ক্রীনশর্টটি পোষ্ট করেছেন। ফেইসবুক ছেয়ে গেছে মোজাক্কিরের মৃত্যুর সংবাদে। গত শুক্রবার বিকেলে মাকে নিয়ে সিএনজি যোগে আইনগাও থেকে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজার নামকস্থানে দ্রুতগতির বেপরোয়া বাসের চাপায় দুমড়ে-মুছড়ে যায় তাদের বহনকারী সিএনজিটি। এতে গুরুতর আহত হন হাফেজ মোজাক্কির হোসেন (২২)। দ্রুত তাকে নেয়া হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। চিকিৎসাও চলছিল দ্রুতগতিতে। অতিরিক্ত রক্তকরণের কারণে প্রয়োজন দেখা দেয় রক্তের। রক্তের জন্য আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন অবিরত। কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা মুজাক্কিরের। অবশেষে রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের বেডে চিরনিদ্রায় চলে যান হাফেজ মোজাক্কির। এদিকে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দিনারপুরে নেমে আসে শোকের ছায়া। তার এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। রাত সাড়ে ৯ টায় মোজাক্কির এর মরদেহ নিয়ে লাশবাহী এম্বুলেন্স বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয়বৃদারক দৃশ্যের অবতারন হয়। মোজাক্কির হোসেন প্রায় দুই বছর পূর্বে স্থানীয় গজনাইপুর জামেয়া ইসলামীয়া ফুরকানিয়া মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হিসেবে সনদপত্র গ্রহণ করেন। কোরআনে হাফেজ হলেও তিনি পেশা হিসেবে বেচে নেন ব্যবসাকে। জনতার বাজারে খুলেন একটি লাইব্রেরী দোকান। ব্যবসাও চলছিল ভালোই। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার ও তার পরিবারের। অল্প বয়সেই পরপারে চলে যেতে হলো মোজাক্কিরকে।


     এই বিভাগের আরো খবর